মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
রাশেদ নাইব:
পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি মানুষের একটি লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্য আছে এবং থাকে, এটাই স্বাভাবিক। তবে তার ধরন ভিন্ন হতে পারে। যেমন, একজন ছাত্রকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তার লক্ষ্য সম্পর্কে, তাহলে সে বলবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইন বিশেষজ্ঞ অথবা একজন আলেম কিংবা শিক্ষক হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ একটি লক্ষ্য থাকে।
অধিকাংশ মানুষের উদ্দেশ্য যখন দুনিয়াবি, তার মধ্যে প্রকৃত মুমিন-মুসলমানের জবাব হবে, দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে মালিক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে অনন্ত সেই পরকালে মহাপ্রলয়ের সন্ধিক্ষণে জান্নাত লাভ এবং অবর্ণনীয় মহাকঠিন জাহান্নাম থেকে মুক্তিই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
আখেরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মানুষের জন্য তার মূল উদ্দেশ্যে কী নির্ধারণ করা উচিত? সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তি কোথায় নিহিত আছে? তা আল্লাহ সুস্পষ্ট করেছেন। কারণ, সবার ধ্যানধারণা, ক্রিয়াকলাপ, চিন্তা-ভাবনা সবকিছু অস্থায়ী পৃথিবীর অত্যন্ত স্বল্পকালীন আয়ুর ভিত্তিতে পরিচালিত। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের ধ্যানধারণার ভিত্তিতে পরিচালিত জীবনের সংখ্যা অতি নগণ্য। যার প্রমাণ জীবনের উদ্দেশ্য জাগতিকভিত্তিক, পরলৌকিকভিত্তিক নয়। এমতাবস্থায় মুমিন-মুসলিমের কার্যকলাপ, ধ্যানধারণা হওয়া উচিত চিরস্থায়ী জীবনকে সামনে রেখে। সেক্ষেত্রে ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ, অসৎকাজগুলো থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।
মুমিনের জীবনের লক্ষ্য কী হবে এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছো সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য।’ সুরা তাওবা : ১১১
মুমিন তার জীবনের লক্ষ্যকে একমাত্র দ্বীনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। আল্লাহর কাছে চিরস্থায়ী জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে নিজেকে। দ্বীনকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করবে। দ্বীনের জন্য তারা লড়াই করবে এবং দ্বীনের জন্যই জীবন দেবে। এর চেয়ে বড় সফলতা আর কী হতে পারে?
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রকৃত মুমিনরা বলবে আমি, একনিষ্ঠভাবে তার দিকে মুখ ফেরাচ্ছি (ইবাদত করছি) যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ সুরা আনআম : ৭৯
মুমিনের লক্ষ্য যেভাবে আল্লাহমুখী হবে, তদ্রƒপ তার দুনিয়ার সব কাজেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশা থাকতে হবে। যারা সত্যিকারের মুমিন তাদের হৃদয়ে সদা আল্লাহর ভয় থাকবে এবং তারা দ্বীনের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে সর্বদা। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে থেকে সর্বাধিক সম্মানিত সে ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন।’ সুরা হুজরাত : ১৩
বর্ণিত আয়াত অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করবে, যার মধ্যে পরকাল নিয়ে ভাবনা আছে। এ বিষয়ে প্রত্যেক মুমিনের সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইসলামি স্কলারদের মতে, সত্যিকারের মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত হলো, সত্যিকার অর্থে আল্লাহভীরু হওয়া। যার প্রমাণ কোরআনে কারিমের শুরুতে বিদ্যমান। আল্লাহ বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে কোনো সন্দেহ কিংবা ভ্রান্তি নেই। এটি সঠিক পথপ্রদর্শক আল্লাহভীরুদের জন্য।’ এখানে বলা হয়নি সঠিক পথপ্রদর্শক মুমিন-মুসলিমদের জন্য। অতএব যারা বিভিন্ন মুসিবত আসার পরও দ্বীনের ওপর দৃঢ় থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে তারাই হচ্ছে প্রকৃত মুসলিম।
মুমিনের উদ্দেশ্য নিয়ে পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিসেও অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী কারিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনটি জিনিস তোমাদের যা মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ইমানের স্বাদ লাভ করতে পারবে। তা হলো, আল্লাহ ও তার রাসুলের কাছে যে অন্য সবার অপেক্ষায় অধিক প্রিয় হবেন, সে কাউকে ভালোবাসবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই এবং সে কখনো কুফরির মধ্যে পুনরায় ফিরে যেতে রাজি হবে না, যেমন রাজি হবে না আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে।’ সহিহ্ বোখারি : ১৫
কাজেই মুমিন-মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত, ক্ষণস্থায়ী জীবনের আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে, চিরস্থায়ী জীবের ভাবনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। তাহলেই কেবল ভয়ানক সেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রত্যাশা করা যাবে।
এর অন্যথায় মানুষ সীমাহীন ক্ষতির মুখোমুখি হবে। নানাবিধ সমস্যা তাকে জর্জরিত করবে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা মানুষকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ সময়ের, নিশ্চয় (সব) মানুষ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ ব্যর্থ এবং জাহান্নামবাসী। কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে এবং যারা পরস্পরকে (কোরআন-হাদিস অবলম্বনে) সত্যের উপদেশ দেয় এবং উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের (সব পরিস্থিতিতে)।’ সুরা আসর
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুমিনের জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের কী কী গুণ থাকতে হবে, সেটাও বলা হয়েছে। যার সারমর্ম হলো, মুমিনের জীবনের লক্ষ্য হবে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় ইসলামের বিধি-নিষেধ মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত হাসিল করা।
ভয়েস/আআ